,

বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েত নতুন করে আলোচনায় এবার দু’ব্যবসায়ী স্বপরিবারে একঘরে

বাহুবল প্রতিনিধি ॥ বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েত নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। এবার তারা দু’ব্যবসায়ীর পরিবারকে ‘একঘরে’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সোমবার গ্রাম পঞ্চায়েতের সভায় এমন কঠিন সিদ্ধান্তের পর পরই ওই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহ জীবন-যাত্রা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করে ওই দু’ব্যবসায়ীর পরিবার গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করেন। এ প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম পঞ্চায়েতের এ সিদ্ধান্তকে মানবতাবিরোধী উল্লেখ করে মুরুব্বীদের স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাদদেহীতা করার জন্য নোটিশ প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুর দিকে পঞ্চায়েতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আব্দুল আলী বাগাল ও তার অনুসারীদের হাতে ওই গ্রামের ৪ শিশু নিহত হয়। ১২ ফেব্র“য়ারি ওই ৪ শিশুকে অপহরণ করা হয়। ১৭ ফেব্র“য়ারি তাদের লাশ গ্রামের নিকটবর্তী ইছাবিলের বালুর গর্ত থেকে মাটি চাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় ওই গ্রামের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বিতর্কের মুখে পড়ে। সূত্র জানায়, উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা মৃত কলিম উল্লার পুত্র মামুন মিয়া ও ফারুক আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনারী, মুদি মাল ও হার্ডওয়ার সামগ্রীর ব্যবসা করে আসছেন। সুন্দ্রাটিকি গ্রামের সাথে আশপাশের গ্রামগুলোর সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেই ওই দুই ব্যবসায়ীর দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে থাকে। এতে তারা প্রায় প্রতিনিয়তই য়তির সম্মুখিন হন। গত দুই বছর আগে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের সাথে পার্শ্ববর্তী পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামবাসী ও রশিদপুর চা বাগানবাসীর সাথে এবং পাঁচ বছর আগে পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামের সাথে অপর একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রতি সংঘর্ষের ঘটনা রশিদপুর বাজারে সংঘটিত হওয়ায় মামুন মিয়া ও ফারুক আহমেদ-এর দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়। এতে তাদের প্রায় ৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এদিকে গত বছরের শেষ দিকে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এজমালী জমি বিক্রি করা হয়। উক্ত জমি বিক্রির কিছু টাকা দিয়ে শিরণী করা হয় এবং অবশিষ্ট টাকা থেকে উল্লেখিত সংঘর্ষগুলোতে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ী মামুন মিয়া ও ফারুক আহমেদ কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। তারা এ ব্যাপারে গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরুব্বীদের সাথে যোগাযোগ করেও সদুত্তর পাননি। এক পর্যায়ে তারা গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু এজমালী জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করেন। এ প্রেক্ষিতে গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় সুইচ গেইট অফিসে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েতের এক মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মিটিং-এ সভাপতিত্ব করেন পঞ্চায়েতের প্রধান মুরুব্বী ফরিদ মিয়া। মিটিং-এ অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল হাই, উস্তার মিয়া, কাঞ্চন মিয়া, নূর মিয়া, টেনু মিয়া, আখল মিয়া ও আমির উল্লা প্রমুখ। উক্ত মিটিং এ ব্যবসায়ী মামুন মিয়া ও ফারুক আহমেদ-এর উপস্থিতিতে একতরফা ভাবে তাদের ‘একঘরে’ করা হয়। সিন্ধান্ত নেয়া হয়, গ্রামবাসী ওই ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সাথে সকল প্রকার সামাজিক, ব্যবসায়ীক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে বিরত থাকবে। এ সিন্ধান্ত লড়ঘনকারীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করারও সিন্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত প্রচার হওয়ার পরপরই উল্লেখিত ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে কেনাকাটা সহ স্বাভাবক জীবন যাপনে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে (০১৭৫৭ ০৯১৯০৫) যোগাযোগ করা হলে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ফরিদ মিয়া বলেন, ব্যবসায়ী মামুন, ফারুক ও হারুন গ্রামের মুরুব্বীদের মানে না। তারা গ্রামের এজমালী জমি দখল করে রেখেছে। তাদের সামাজিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ‘একঘরে করা হয়েছে কী না’- প্রশ্ন করা হলে তিনি মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন। পূনরায় তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, পঞ্চায়েতের এ মানবতাবিরোধী সিদ্ধান্ত বেআইনি। এদেরকে আগামী সোমবার (১০ অক্টোবর) স্ব-শরীরে হাজির হয়ে জবাবদিহিতার জন্য নোটিশ করেছি এবং থানার অফিসার ইনচার্জকে একঘরে রাখা পরিবার দুইটিকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।


     এই বিভাগের আরো খবর